বানানের কয়েকটি সাধারণ নিয়ম

অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি - বানান | | NCTB BOOK
3

ক. বানানে ই ঈ, উ ঊ-এর ব্যবহার

১. যেসব তৎসম শব্দের বানানে হ্রস্ব ও দীর্ঘ উভয় স্বর ( ই ঈ, ঊ ) অভিধানসিদ্ধ, সে ক্ষেত্রে এবং অতৎসম ( তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র ) শব্দের বানানে হ্রস্বস্বর (ই,ি উ ू) হবে। যেমন :

তৎসম শব্দে :
অঙ্গুরি, অটবি, আবির, আশিস্, উষা, কিংবদন্তি, কুটির, গণ্ডি, গ্রন্থাবলি, চিৎকার, তরণি, তরি, দেশি, পদবি, বিদেশি, ভ্রু, শ্রেণি, সারণি।

অতৎসম শব্দে :
আদমি, আপিল, আমিন, আলমারি, উকিল, উর্দু, কাজি, কারবারি, কারিগরি, কুমির, কেরানি, খ্রিষ্ট, খ্রিষ্টাব্দ, গরিব, গাজি, গাড়ি, গিন্নি, চাকরি, জরুরি, জানুয়ারি, ডিগ্রি, দরকারি, দাবি, দিঘি, ধুলো, নার্সারি, পড়শি, পদবি, বাড়ি, বাঁশি, বাঙালি, বে-আইনি, ভুতুড়ে, মিস্ত্রি, মুলো, মেয়েলি, যিশু, রেশমি, লটারি, লাইব্রেরি, শাশুড়ি, শিকারি, সবজি, সরকারি, সুন্নি, হাজি, হিজরি।

 

২. কয়েকটি স্ত্রীবাচক শব্দের শেষে ঈ-কার হবে। যেমন :

অভিনেত্রী, কর্ত্রী, কল্যাণী, কিশোরী, গাভী, গুণবতী, চণ্ডী, চতুর্দশী, ছাত্রী, জননী, তরুণী, দাসী, দুঃখিনী, দেবী, নারী, পত্নী, পিশাচী, বিদুষী, বুদ্ধিমতী, মাতামহী, মানবী, যুবতী, লক্ষ্মী, শ্রীমতী, সতী, সরস্বতী, হরিণী, হৈমন্তী।

 

৩. ভাষা ও জাতির নামের শেষে ই-কার হবে। যেমন :

আফগানি, আরবি, ইংরেজি, ইরাকি, ইরানি, ইহুদি, কাশ্মিরি, জাপানি, তুর্কি, নেপালি, পাকিস্তানি, পাঞ্জাবি, ফরাসি, বাঙালি, সাঁওতালি, সিন্ধি, হিন্দি।

 

৪. বিশেষণবাচক ‘আলি'-প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ই-কার হবে। যেমন : 

চৈতালি, পুবালি, বর্ণালি, মিতালি, মেয়েলি, রুপালি, সোনালি।

 

খ. বানানে ও-এর ব্যবহার

১. ক্রিয়াপদের বানানে পদান্তে ও-কার (CT) অপরিহার্য নয়। যেমন : 

    আনব, করত, খেলব, চলব, দেখত, ধরব, নাচব, পড়ব, বলত, মরব, মরাব, লড়ব, লিখব।

 

২. বর্তমান অনুজ্ঞার সামান্যরূপে পদান্তে ও-কার প্রদান করা যায়। যেমন :

    আনো, করো, খেলো, চলো, দেখো, ধরো, নাচো, পড়ো, বলো, মারো, লড়ো, লেখো।

 

৩. ‘আনো’ প্রত্যয়ান্ত শব্দের শেষে ও-কার হবে। যেমন :

    করানো, খাওয়ানো, ঠ্যাঙানো, দেখানো, নামানো, পাঠানো, শোয়ানো।

 

৪. অর্থ বা উচ্চারণ বিভ্রান্তির সুযোগ থাকলে কিছু বিশেষ্য, বিশেষণ ও অব্যয় শব্দে ও-কার দেওয়া আবশ্যক । যেমন :

    কাল (সময়), কালো (কৃষ্ণ বর্ণ);

    কোন (কী, কে, কোনটি), কোনো (বহুর মধ্যে এক) ; 

    ভাল (কপাল), ভালো (উত্তম)৷

 

গ. বানানে বিসর্গ ( ঃ )-এর ব্যবহার

১. পদান্তে বিসর্গ ( ঃ ) থাকবে না। যেমন :

    ক্রমশ, দ্বিতীয়ত, প্রথমত, প্রধানত, বস্তুত, মূলত।

 

২. পদমধ্যস্থ বিসর্গ থাকবে। যেমন :

    অন্তঃস্থ, দুঃখ, দুঃসহ, নিঃশব্দ, পুনঃপুন, স্বতঃস্ফূর্ত।

 

৩. অভিধানসিদ্ধ হলে পদমধ্যস্থ বিসর্গ বর্জনীয়। যেমন :

    দুস্থ, নিশ্বাস, নিস্পৃহ, বহিস্থ, মনস্থ।

 

ঘ. বানানে মূর্ধন্য-ণ ও দন্ত্য-ন-এর ব্যবহার

১. যুক্তব্যঞ্জনে (তৎসম শব্দে) ট-বর্গীয় বর্ণের (ট ঠ ড ঢ) পূর্ববর্তী দন্ত্য-ন ধ্বনি মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন : কণ্টক, ঘণ্টা, নির্ঘণ্ট, বণ্টন, অকুণ্ঠ, আকণ্ঠ, উৎকণ্ঠা, উপকণ্ঠ, কণ্ঠ, কণ্ঠনালি, লুণ্ঠন, অকালকুষ্মাণ্ড, অণ্ড, কাণ্ড, কাণ্ডারী, কুণ্ডল, খণ্ড, চণ্ডী, দণ্ড, পণ্ডিত, ভণ্ড, ভণ্ডামি৷

 

২. তৎসম শব্দে ঋ, ঋ-কার (, ), র, র-ফলা (, ), রেফ (´ ), ষ, ক্ষ-এর পর মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন : < ঋণ, তৃণ, অরণ্য, ত্রাণ, বর্ণ, বিদূষণ, বিশেষণ, ক্ষণ, ক্ষণিক।

 

৩. একই শব্দের মধ্যে ঋ, ঋ-কার, র, র-ফলা, রেফ, ষ, ক্ষ-এর যে কোনোটির পরে স্বরবর্ণ, ক-বর্গ, প-বর্গ এবং য, য়, হ, অনুস্বার (ং), – এই বর্ণগুলোর একটি বা একাধিক বর্ণ থাকলেও পরবর্তী ন-ধ্বনি মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন :

কৃপণ, নিরূপণ, অগ্রহায়ণ, অকর্মণ্য, নির্বাণ, সর্বাঙ্গীণ, অপেক্ষমাণ, বক্ষ্যমাণ৷

 

৪. প্র, পরা, পরি, নির- এই চারটি উপসর্গের পর নম্, নশ্, নী, নু, অনু, হন্ প্রভৃতি ধাতুর দন্ত্য-ন স্থলে মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন :

    প্ৰ : প্ৰণাম, প্রণব, প্রণীত, প্ৰণিপাত,

    পরা : পরায়ণ, পরাহ্ ;

    পরি : পরিণতি, পরিণাম, পরিণয়, 

    নির : নির্ণীত, নির্ণয়, নির্ণায়ক।

 

৫. যুক্তব্যঞ্জন গঠনে (অতৎসম শব্দে) ট-বর্গের পূর্বে দন্ত্য-ন হয়। যেমন :

    ইন্টার, উইন্টার, কারেন্ট, গ্র্যান্ড, টেন্ডার, প্যান্ট, ব্যান্ড, লন্ডন, সেন্ট্রাল৷

 

৬. যুক্তব্যঞ্জন গঠনে (তৎসম, অতৎসম সকল শব্দে) ত-বর্গের পূর্বে দন্ত্য-ন হয়। যেমন :

    অনন্ত, অন্তরঙ্গ, একান্ত, ক্লান্ত, জ্বলন্ত, মন্ত্রী, গ্রন্থ, পান্থ, অনিন্দ্য, পরান্ন, প্রচ্ছন্ন, রান্না, সান্নিধ্য।

 

৭. সন্ধি ও সমাসযোগে গঠিত শব্দের বানানে দন্ত্য-ন বহাল থাকে। যেমন :

    অগ্রনায়ক, অহর্নিশ, ক্ষুন্নিবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, দুর্নাম, দুর্নিবার, দুর্নীতি, নির্নিমেষ, শিক্ষাঙ্গন

 

৮. তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দে সর্বত্র দন্ত্য-ন হবে। যেমন :

    আপন, আয়রন, কুর্নিশ, কোরান, গ্রিন, চিরুনি, ঝরনা, ধরন, বার্নিশ, মেরুন, লন্ঠন, শিহরন, হন।

 

ঙ. বানানে মূর্ধন্য-ষ-এর ব্যবহার

১. ঋ কিংবা ঋ-কার (.)-এর পরে মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন :

    ঋষি, কৃষি, কৃষক, কৃষ্ণ, তৃষ্ণা, তৃষিত, দৃষ্টি, সৃষ্টি, হৃষ্টচিত্ত।

 

২. র-ধ্বনি রেফ (′)-এর রূপ নিয়ে কোনো ব্যঞ্জনবর্ণের মাথায় বসলে ঐ ব্যঞ্জনের পর মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন :

    আকর্ষণ, ঈর্ষা, উৎকর্ষ, বর্ষা, বর্ষণ, বিমর্ষ, মুমূর্ষু, শীর্ষ, সপ্তর্ষি, হর্ষ।

 

৩. অ, আ ছাড়া অন্য কোনো স্বরবর্ণ এবং ক্, র্ বর্ণের পরবর্তী দন্ত্য-স মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন :

    ঈষৎ, ঊষা, এষণা, কোষ, জিগীষা, বিষম, ভবিষ্যৎ, রোষ, সুষমা।

 

৪. ই-কারান্ত ও উ-কারান্ত উপসর্গের পর কতকগুলো ধাতুতে মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন :

    সঙ্গ> অনুষঙ্গ, সেক> অভিষেক, স্থান> অধিষ্ঠান, সুপ্ত> সুষুপ্ত।

 

৫. যুক্তব্যঞ্জন গঠনে (তৎসম শব্দে) ট-বর্গের পূর্বে মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন :

    অনিষ্ট, অষ্টম, আড়ষ্ট, উচ্ছিষ্ট, উপদেষ্টা, কষ্ট, চেষ্টা, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠা, ভূমিষ্ঠ, শ্রেষ্ঠ, সুষ্ঠু।

 

৬. যুক্তব্যঞ্জন গঠনে (তৎসম, অতৎসম সকল শব্দে) ত-বর্গের পূর্বে দন্ত্য-স হয়। যেমন :

    অধস্তন, ইস্তফা, উদ্বাস্তু, ওস্তাদ, কস্তুরি, কাস্তে, জবরদস্তি, স্থান, স্থানীয়, স্বাস্থ্য।

 

৭. যুক্তব্যঞ্জন গঠনে (তৎসম, অতৎসম সকল শব্দে) চ-বর্গের পূর্বে তালব্য-শ হয়। যেমন :

    আশ্চর্য, দুশ্চরিত্র, নিশ্চয়, পশ্চাৎ, প্রায়শ্চিত্ত, বৃশ্চিক, নিশ্ছিদ্র।

 

চ. বানানে রেফ (´) - এর ব্যবহার

রেফ-এর পর কোথাও ( তৎসম, অতৎসম সকল শব্দে ) ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন :

    কর্জ, কর্ম, কার্য, পূর্ব, ফর্দ, মর্মর, শর্ত, সূর্য।

 

ছ. বানানে ঙ / ং-এর ব্যবহার

১. সন্ধিতে (তৎসম শব্দে) প্রথম পদের শেষে ম্ থাকলে ক-বর্গের পূর্বে ম্ স্থানে ং (অনুস্বার) হবে। যেমন : 

     অহংকার (অহম্ +কার), কিংকর, কিংবদন্তি, ঝংকার, ভয়ংকর, সংকল্প, সংকীর্ণ, সংগীত, সংঘ, সংঘাত, হুংকার।

 

২. উপর্যুক্ত নিয়মে সন্ধিজাত না হলে, যুক্তব্যঞ্জনে ক-বর্গের পূর্বে ম্ স্থানে ঙ (উয়োঁ)) হবে। যেমন : 

     আকাঙ্ক্ষা, অঙ্কুর, অঙ্গ, ইঙ্গিত, উচ্ছৃঙ্খল, কঙ্কাল, কাঙ্ক্ষিত, গঙ্গা, জঙ্গি, দাঙ্গা, পঙ্কজ, পঙ্গু, বঙ্গ, ভঙ্গি, লঙ্ঘন, শিক্ষাঙ্গন, সঙ্গী।

 

৩. প্রত্যয় ও বিভক্তিহীন শব্দের শেষে ং (অনুস্বার) ব্যবহৃত হয়। 

     যেমন : আড়ং, ইদানীং, এবং, ঠ্যাং, ঢং, পালং, ফড়িং, বরং, রং, শিং।

 

৪. তবে অনুস্বারযুক্ত শব্দে প্রত্যয়, বিভক্তি বা স্বরবর্ণ যুক্ত হলে ং স্থলে ঙ লেখা হবে। যেমন :

    আড়ঙে, টঙে, ঢঙে, ফড়িঙের, রঙিন, রাঙিয়ে, সঙের।

Content added || updated By
Promotion